ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার যেমন হয়

ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির ভারসাম্য সমানভাবে রক্ষা করতে হয়। তাই বলে ঘাবড়ে যাবার কিছু নেই। এ খাতে কাজের পরিধি এত বড় যে আপনি চাইলে নিজের দক্ষতার সাথে মানানসই স্পেশালাইজেশন নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে এবারের লেখা থেকে দরকারি কিছু তথ্য জেনে নিন।

  1. ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার বলতে আসলে কী বোঝায়?

ডিজিটাল মার্কেটিং একক কোনো ক্ষেত্র নয়। বরং বিভিন্ন ডিজিটাল চ্যানেল বা মাধ্যমে কোনো প্রোডাক্ট, সার্ভিস বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালান একজন ডিজিটাল মার্কেটার। যেমন:

  • সোশ্যাল মিডিয়া
  • ইমেইল
  • সার্চ ইঞ্জিন
  • মোবাইল অ্যাপ স্টোর
  • ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম

ব্যক্তিগত আগ্রহ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা আর প্রয়োজন সাপেক্ষে একজন ডিজিটাল মার্কেটার সব ডিজিটাল মাধ্যম বা নির্বাচিত কয়েকটি মাধ্যম নিয়ে কাজ করে নিজের ক্যারিয়ার গড়েন।

দুইভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে আপনার জন্য:

  • চাকরি
  • ফ্রিল্যান্সিং

সময় বের করতে পারলে একসাথে দুইভাবেই কাজ করতে পারবেন।

  1. ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে চাকরি

কোনো প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে যোগ দিলে ক্যারিয়ারের ধাপ প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করবে। একটি উদাহরণ হতে পারে এমন:

  • জুনিয়র ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ বা ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েট
  • সিনিয়র ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ
  • মার্কেটিং ম্যানেজার
  • সিনিয়র মার্কেটিং ম্যানেজার
  • অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ডিরেক্টর
  • মার্কেটিং ডিরেক্টর

স্পেশালাইজেশন অনুযায়ীও পদের নাম নির্দিষ্ট হতে পারে। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে স্পেশালাইজেশনের ক্ষেত্রে মার্কেটিং ম্যানেজারের পদবী হয়ে যেতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার বা কমিউনিটি ম্যানেজার।

  1. ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং

সারা বিশ্বে ডিজিটাল মার্কেটারদের কাজের চাহিদা থাকার কারণে আপনি হয়তো ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। এভাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে আপনাকে প্রথমে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

  1. ডিজিটাল মার্কেটিং এ ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা
  • ব্যক্তিগত প্রয়োজন, ইচ্ছা ও সময়-সুযোগ অনুযায়ী কাজ বাছাই করতে পারবেন।
  • কাজের পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে।
  • একাধিক ক্ষেত্র থেকে উপার্জন করা সম্ভব।
  • যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিংয়ের দক্ষতা ঝালাই করতে সাহায্য করে।
  • স্বাভাবিক কাজের বাইরে গিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ থাকে।
  • সর্বশেষ প্রযুক্তি নিয়ে অন্যদের আগে কাজ করা যায়, যা অনেক সময় সাধারণ চাকরির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
  1. ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের অসুবিধা
  • অভিজ্ঞতা না থাকলে শুরুতে কাজ পাওয়া কঠিন।
  • প্রতিনিয়ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মার্কেটারদের সাথে প্রতিযোগিতা করে নতুন কাজের খোঁজ করতে হয়।
  • উপার্জন সম্পূর্ণরূপে আপনার যোগাযোগের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, কাজের দক্ষতা ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার উপর নির্ভর করে।
  • অনেক সময় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পুরো প্রজেক্টের কাজ একা সামলাতে হবে, যা অভিজ্ঞতা ছাড়া অত্যন্ত কঠিন।
  • দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত চাপের কারণে শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা নতুন কাজ খুঁজে পেতে বাধা তৈরি করে।
  1. ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম
  • Upwork
  • Freelancer
  • Fiverr

এ প্ল্যাটফর্মগুলো ছাড়াও স্পেশালাইজড প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যেখানে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ফ্রিল্যান্সিং প্রজেক্ট খুঁজে পেতে পারেন।

প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের কিছু সুবিধা-অসুবিধা আছে। ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসাবে নিতে চাইলে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেলুন। এতে আপনি সহজেই নিজের জন্য যথাযথ প্ল্যাটফর্ম খুঁজে বের করতে পারেন। তবে শুধু একটি প্ল্যাটফর্মের উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে একাধিক প্ল্যাটফর্মে পোর্টফোলিও গড়ে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

  1. ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কেমন রোজগার করা যায়?

এ প্রশ্নের ধরাবাঁঁধা উত্তর দেয়া কঠিন। চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ধরন, আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অনেক কিছুর উপর বেতন নির্ভর করে। সাধারণত জুনিয়ার পজিশনে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মাসিক ৳১৮,০০০ – ২৫,০০০ উপার্জন করা সম্ভব। স্পেশালাইজড আর সিনিয়র পজিশনের বেলায় তা কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণত ৫ – ৬ বছরের অভিজ্ঞতা ও ভালো পারফরম্যান্স রেকর্ড থাকা দরকার।

ফ্রিল্যান্সিয়ের বেলায় আপনার উপার্জন ক্লায়েন্টের সংখ্যা, তাদের বাজেট ও প্রজেক্টভেদে নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ, যত বেশি ক্লায়েন্টের কাজ পাবেন, উপার্জন তত বাড়বে। আবার ভালো রিভিউ পেলে রেটের পরিমাণ বড় করতে পারবেন, যা আপনার আয় বাড়িয়ে দেবে।

  1. ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে আপনার কাজ কী হবে?

কোনো প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে থাকলে দৈনন্দিন আপনাকে যে কাজগুলো করতে হতে পারে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর জন্য মার্কেটিং পরিকল্পনা বানানো,
  • প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট আপলোড ও আপডেট করা,
  • সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে পোস্ট করা ও ইউজারদের সাথে যোগাযোগ রাখা,
  • মার্কেটিং কন্টেন্ট – যেমন, ব্লগ পোস্ট ও গ্রাফিকস – তৈরিতে সাহায্য করা,
  • ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানো,
  • ক্লায়েন্ট, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ও পার্টনারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা,
  • পেইড মিডিয়া (Paid Media) বা বিজ্ঞাপনের দায়িত্ব নেয়া ও প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন এজেন্সির সাথে কাজের সমন্বয় রাখা,
  • মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স – যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া পারফরম্যান্স – নিয়ে কাজ করা,
  • সেলস ও মার্কেটিং রিপোর্ট তৈরি করা,
  • ডিজিটাল ট্রেন্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাবে, আপনাকে হয়তো ফোন, ইমেইল বা কনফারেন্স কলের সাহায্যে কাজগুলো করতে হচ্ছে।

এজেন্সিতে চাকরির ক্ষেত্রে আপনাকে হয়তো ক্লায়েন্টদের সাথে সরাসরি দেখা করতে হবে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি। দৈনন্দিন এত কাজের মধ্যে লক্ষ্য হারিয়ে ফেলা অনেকটাই সহজ। তবে কাজগুলোকে আগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজিয়ে নিলে তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আপনাকে সাহায্য করবে।

  1. ডিজিটাল মার্কেটার হবার উপায় কী?

চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং – আপনি যেভাবেই ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চান না কেন, আপনাকে নিয়মিত শেখা চালিয়ে যেতে হবে। দক্ষতা অর্জনে সক্রিয় আর কৌতূহলী হবার পাশাপাশি ব্যবসার নানা দিক সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আসতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি থাকা সবসময় আবশ্যক নয়। তবে বাংলাদেশের কিছু বিষয়ের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে প্রাধান্য দেয়া হয় বা চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা থাকে। বিষয়গুলো হলো:

  • মার্কেটিং
  • মিডিয়া, কমিউনিকেশন ও জার্নালিজম
  • ক্রিয়েটিভ ডিজাইন

তবে ডিগ্রি অর্জনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকা।

একদম শূন্য অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করার জন্য নিচের দক্ষতাগুলোতে মনোযোগ দিতে পারেন:

  • স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং
  • মার্কেটিং অ্যানালিটিক্স ও অডিয়েন্স রিসার্চ
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (যেমন, ফেসবুক মার্কেটিং ও ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং)

পরবর্তীতে শিখুন:

  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও (SEO) 
  • কনভার্শন অপটিমাইজেশন
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানেজমেন্ট
  • ইউএক্স ডিজাইন

মার্কেটিং বা কমিউনিকেশন সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে আপনার যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি না থাকে, তাহলে কোর্স আর ট্রেনিং নিতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনেও শেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

কোর্স বা ট্রেনিং করার সুবিধা হলো, সব রিসোর্স এক জায়গায় গোছানো অবস্থায় পাবেন। এছাড়া, কোনো সমস্যায় পড়লে ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া সম্ভব। সাথে থাকে প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ। আবার অনলাইন কোর্সের বেলায় নিজের মতো শেখা যায়। যেমন, বহুব্রীহির ৬ মাসের বিশেষ ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করার মাধ্যমে আপনি যাবতীয় কাজ প্র্যাকটিক্যাল প্রজেক্টের মাধ্যমে শিখতে পারবেন। একেবারে কারোর সাহায্য নিয়ে ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করেও দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু সাধারণত এতে প্রচুর সময় লাগে। এছাড়া, প্র্যাকটিক্যাল কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। যেমন, ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে হলে ওয়েবসাইট থাকার দরকার হয়।

  1. ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

কঠিন মনে হচ্ছে? এটা স্বাভাবিক। কাজের ক্ষেত্র বিশাল হবার কারণে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার হিসাবে চ্যালেঞ্জিং। মার্কেটিংয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলে শুরুতে হয়তো আপনার আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু দক্ষতা অর্জন করে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং করে ঠিকই ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। ব্যক্তিগত আগ্রহ, অভিনব চিন্তা করার ক্ষমতা আর মার্কেটিং টুলগুলোর দক্ষ ব্যবহার  এ তিনটি বিষয় আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে এ ক্যারিয়ারে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on pinterest
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
Testimonials
Subscribe weekly news

ব্যবসায়ের প্রচার ও প্রসার বাড়াতে চান? দেশ সেরা মার্কেটিং সেবা নিতে যোগাযোগ করুন

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

We love writing great content and sharing industry insights. To get a copy of our research on latest trends , subscribe to our newsletter